প্রশ্ন
From: মোঃ মিশন আলী
বিষয়ঃ সুরা ফাতিহা
ইমামের পিছনে সুরা ফাতিহা পড়া যাবে কি না?
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
নামাযে সূরা ফাতিহা এবং তার সাথে অতিরিক্ত কোন সূরা না পড়লে নামায পূর্ণ
হয় না। কোন নামায শুদ্ধ হতে হলে সূরা ফাতিহা পড়া আবশ্যক। সেই সাথে সূরা
ফাতিহার পর কুরআনের অন্য কোন সূরার কিছু আয়াত পড়াও আবশ্যক।
হাদীসে পরিস্কার এসেছে-
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لاَ صَلاَةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الكِتَابِ»
উবাদা বিন সামেত রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, সূরা ফাতিহা না পড়লে নামায হবে না। [বুখারী, হাদীস নং-৭৫৬]
أَنَّ عُبَادَةَ بْنَ الصَّامِتِ، أَخْبَرَهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا
صَلَاةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِأُمِّ الْقُرْآنِ» وَحَدَّثَنَاهُ
إِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، وَعَبْدُ بْنُ حُمَيْدٍ، قَالَا: أَخْبَرَنَا
عَبْدُ الرَّزَّاقِ، أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، بِهَذَا الْإِسْنَادِ مِثْلَهُ وَزَادَ فَصَاعِدًا
উবাদা বিন সামেত রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, সূরা ফাতিহা
না পড়লে নামায হবে না, [আরেক বর্ণনায় এসেছে] এবং অতিরিক্ত সূরা না পড়লেও
নামায হবে না। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৩৯৪]
উপরোক্ত দু’টি হাদীস দ্বারা আমাদের কাছে পরিস্কার যে, সুরা ফাতিহা ও এর সাথে অতিরিক্ত সূরা না মিলালে নামায পূর্ণ হয় না।
কিন্তু এখন প্রশ্ন হল, ব্যক্তি যখন মুক্তাদী হয়, তখনো কি তার নামায সূরা ফাতিহা এবং অন্য সূরা সাথে না মিলালে তার নামায হবে না?
লা-মাযহাবীরা বলেন, মুক্তাদী সূরা ফাতিহা না পড়লে তার নামায হবে না,
কিন্তু মুক্তাদী যদি সূরা ফাতিহার পর সূরা না মিলায় তাহলে তার নামায হয়ে
যাবে।তখন ইমাম যে সূরা মিলাবে, তা মুক্তাদীর পক্ষ থেকে হয়ে যাবে।
আমরা বলি মুক্তাদীর কোন কিরাতই পড়তে হবে না। কারণ ইমামের কিরাতই
মুক্তাদীর কিরাত। ইমাম সূরা ফাতিহার পর বাকি সূরা মিলালে যেমন তা মুক্তাদীর
পক্ষ থেকে হয়ে যায়, তেমনি সূরা ফাতিহা পড়লেও তা মুক্তাদীর পক্ষ থেকে হয়ে
যাবে। মুক্তাদীর আলাদাভাবে সূরা ফাতিহা ও পড়তে হবে না, সেই সাথে অতিরিক্ত
সূরাও মিলাতে হবে না।
কারণ তিলাওয়াত করলে পিছনে চুপ থাকার নির্দেশ পবিত্র কুরআনে যেমন এসেছে,
তেমনি সহীহ হাদীসেও এসেছে। সেই সাথে ইমামের সকল কিরাতই মুক্তাদীর জন্য
যথেষ্ট হয় মর্মে সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।
عَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ كَانَ لَهُ إِمَامٌ، فَقِرَاءَةُ الْإِمَامِ لَهُ قِرَاءَةٌ»
হযরত জাবের রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যার ইমাম রয়েছে,
তার ইমামের কিরাত মানেই হল তার কিরাত। {মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং-১২৪,
মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৪৬৪৩, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৮৫০, তাহাবী
শরীফ, হাদীস নং-১২৯৪,মুজামে ইবনুল আরাবী, হাদীস নং-১৭৫৫,সুনানে দারা কুতনী,
হাদীস নং-১২৩৩,মুসন্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-২৭৯৭,মারেফাতুস সুনান
ওয়াল আসার, হাদীসনং-৩৭৬৪, সুনানে কুবরা লিলবায়হাকী,হাদীস নং-২৮৯৭, মুসন্নাফ
ইবনে আবীশাইবা, হাদীস নং-৩৭৭৯, মুসনাদে আবীহানীফা, হাদীস নং-২৫}
হাদীসটির ক্ষেত্রে মুহাদ্দিসীনদের বক্তব্য-
১
আল্লামা ইবনে কাসীর রহঃ বলেন, এটি মারফুর চেয়েও অধিক সহীহ। {আলআহকামুল কাবীর-২/৪৭২}
২
আল্লামা বুসিরী রহঃ বলেন, এর সনদটি বুখারী মুসলিমের সনদের মতই সহীহ। {ইতহাফুল খাইরাতিল মাহরাহ-২/১৬৮}
৩
আল্লামা কামাল ইবনে হুমাম রহঃ বলেন, মুসলিমের শর্তানুপাতে এ হাদীসটির সনদ সহীহ। {শরহে ফাতহুল কাদীর-১/৩৪৬}
৪
আল্লামা সানআনি রহঃ বলেন, অনেক সূত্রে তা বর্ণিত। এটি গ্রহণ করা আবশ্যক। {আলইদ্দাতু আলাল আহকাম-২/২৬৮}
৫
আলবানী রহঃ বলেন, হাদীসটি হাসান। {সহীহ ইবনে মাজাহ, বর্ণনা নং-৬৯৯, সহীহুল জামে, বর্ণনা নং-৬৪৮৭}
৬
আলবানী রহঃ আরো বলেন, মুসনাদে আহমদ বিন মানী এর সনদ প্রমাণিত হলে এটি
সহীহ ও মাউসূল, নতুবা সহীহ সনদের মুরসাল। আর তার অনেক তুরুক রয়েছে যার একটি
অপরটিকে শক্তিশালী করেছে। {আসলু সিফাতিস সালাত-১/৩৫৫}
৭
আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রহঃ বলেন, এর অনেক তুরুক রয়েছে, যার একটি অপরটিকে শক্তিশালী করেছে। {উমদাতুল কারী-৬/১৭}
৮
আল্লামা মোল্লা আলী কারী রহঃ বলেন, এর সনদ সহীহ। {শরহে মুসনাদে আবী হানীফা, বর্ণনা নং-৩০৮}
৯
আলবানী রহঃ এর লিখিত সিফাতি সালাতিন নাবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম গ্রন্থের বাংলা অনুবাদ যা লা-মাযহাবীদের নিজস্ব প্রকাশনী তাওহীদ
পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত হয়েছে। বাংলা নাম “রাসূল সাঃ এর সালাত আদায়ের
পদ্ধতি” নামক বইয়ের ৮৫ নং পৃষ্ঠার শুরুতে উক্ত হাদীস এনে আলবানী সাহেবের যে
টিকা লিখা হয়েছে, তাতে পরিস্কার লিখা হয়েছে “শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া
উক্ত হাদীসকে শক্তিশালী বলেছেন। {রাসূল সাঃ এর সালাত আদায়ের পদ্ধতি,
নাসীরুদ্দীন আলবানী কৃত, প্রকাশক-তাওহীদ পাবলিকেশন্স, পৃষ্ঠা-৮৫]
পরিস্কার বুঝা গেল উপরোক্ত হাদীসটি সহীহ হাদীস। আর উক্ত সহীহ
হাদীসের উপর ভিত্তি করে আমরা বলি ইমামের পিছনে কোন কিরাত পড়বে না। চাই তা
সূরা ফাতিহা হোক বা অন্য কোন সূরা।
অথচ একাকি নামায পড়লে সূরা ফাতিহা না পড়লেও নামায পূর্ণ হয় না, তেমনি সূরা ফাতিহার পর অন্য সূরা না মিলালেও নামায পূর্ণ হয় না।
কুরআনে কারীমে এসেছে-
وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآنُ فَاسْتَمِعُوا لَهُ وَأَنصِتُوا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ [٧:٢٠٤
আর যখন কোরআন পাঠ করা হয়, তখন তা শ্রবণ কর এবং নিশ্চুপ থাক যাতে তোমাদের উপর রহমত হয়। {সূরা আরাফ-২০৪}
কুরআন তিলাওয়াতের সময় দুটি কাজের নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহ তাআলা। যথা-
১- শ্রবণ করা।
২- নিশ্চুপ থাকা।
কোন একটি বিষয় শুনার জন্য চুপ থাকতে হয়, তা সর্বজন বিদিত বিষয়। কথা বলতে
বলতে কারো কথা শুনা যায় না। সুতরাং কোন কিছু শ্রবণ করতে মনযোগি হওয়া মানেই
হল, তাকে চুপ থাকতে হবে, তাহলে আল্লাহ তাআলা দ্বিতীয়বার কেন চুপ থাকার কথা
বললেন?
শ্রবণের জন্যতো চুপ থাকা আবশ্যক।
এর জবাব হল, শ্রবণ করার সম্পর্ক হল, যেসব কিরাত ইমাম সাহেব জোরে জোরে
পড়েন তার সাথে। অর্থাৎ যে কিরাত শুনা যায়, তা শুন। আর যে কিরাত শুনা যায়
না, ইমাম আস্তে আস্তে পড়ে থাকেন, তাহলে সেক্ষেত্রে মুসল্লি চুপ করে থাকবে।
তাহলে আয়াতর শ্রবণ করা ও নিশ্চুপ থাকা উভয় বক্তব্যই যথার্থ। কোনটি অতিরিক্ত বা অযথা আনা হয়নি।
সূরা ফাতিহা ছাড়া নামায হয় না যেমন খুতবা ছাড়া জুমআ হয় না
খুতবা ছাড়া জুমআ হয় না, তেমনি সূরা ফাতিহা ছাড়া নামায হয় না। কিন্তু
খুতবা যেমন ইমাম পড়লেই সবার পক্ষ থেকে হয়ে যায়, সবার খুতবা পড়ার দরকার নেই।
তেমনি সূরা ফাতিহা ছাড়া নামায হয় না, কিন্তু ইমাম সূরা ফাতিহা পড়লেই
মুক্তাদীর সূরা ফাতিহা আদায় হয়ে যায়, তার আলাদাভাবে সূরা ফাতিহা পড়ার দরকার
নেই।
মুক্তাদীর আলাদা কিরাত পড়তে হয় না
ইমামের কিরাত মানেই মুক্তাদীর কিরাত। যেমন ইমামের নামায শুদ্ধ হওয়া
মানেই মুক্তাদীর নামায শুদ্ধ হওয়া। ইমামের নামায অশুদ্ধ হওয়া মানেই
মুক্তাদীর নামায অশুদ্ধ হওয়া।
যেমন ইমামের খুতবা পড়ার মানেই হল মুসল্লিদের খুতবা পড়া হয়ে যায়। আলাদাভাবে সবার খুতবা পড়ার দরকার নেই।
যেমন একজন আজান দেয়ার দ্বারাই মুসল্লিদের সবার আজান দেয়া হয়ে যায়, আলাদাভাবে সবার আজান দিতে হয় না।
যেমন একজন ইকামত দেয়ার দ্বারাই মুসল্লিদের সবার ইকামত হয়ে যায়, আলাদাভাবে সবার ইকামত দেয়ার দরকার নেই।
তেমনি ইমামের সূরা ফাতিহা ও কিরাত পড়ার দ্বারাই মুসল্লিদের পক্ষ থেকে
সূরা ফাতিহা ও কিরাত পড়া হয়ে যায়, তাই মুক্তাদীর জন্য আলাদাভাবে সূরা
ফাতিহা বা কিরাত পড়ার কোন দরকার নেই।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
http://ahlehaqmedia.com/4937-2/